ঘুমের সমস্যার সমাধানঃ ওষুধ বনাম অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা কি? আয়ুর্বেদের ভাষায় অশ্বগন্ধা কে বলা হয় বলদা, বাজিগর বা শীতকালীন চেরি। এটি উইথানিয়া সোমনিফেরা নামে একটি ছোট চিরহরিৎ গুল্ম থেকে তৈরি হয়, সাধারণত আয়ুর্বেদ এবং শারীরিক সমস্যার বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।

ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়রা এই ছোট চিরহরিৎ গুল্মটি এর ঔষধি বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য সংগ্রহ করেনএবং আধুনিক ঔষধের একটি কার্যকর ও নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করেন।

অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে?

নিয়মিত ঘুম-প্ররোচিত করার পাশাপাশি অশ্বগন্ধা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এমনই একটি উপকারিতা হল মানসিক চাপ উপশম। প্রাথমিক গবেষণা থেকে বোঝা যায় অশ্বগন্ধা মানসিক চাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকর। 

এছাড়া অশ্বগন্ধা এন্ডোক্রাইন, স্নায়ুতন্ত্র এবং কার্ডিওপালমোনারি সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর গুণাবলিও রয়েছে।

বেশির ভাগ মানুষের ঘুমের সমস্যার প্রধান দুটি কারণ হলো- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ। গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে, একটানা বেশি সময় ঘুমাতে এবং ভাল ঘুমের গুণমান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত ট্রাই ইথাইল গ্লাইকল ঘুম বাড়ায় যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, কার্ডিওপালমোনারি এবং এন্ডোক্রাইন সহ শরীরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করতে কাজ করে।  

অশ্বগন্ধা কি আপনাকে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে?

অশ্বগন্ধার একটি বিশেষ গুণ হল এটি অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে এবং ঘুমের গুণগতমান অর্জন করে বেশি সময় ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। অশ্বগন্ধায় বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যা প্রাকৃতিক ভাবে ঘুমের সহায়ক হিসাবে কাজ করে থাকে। 

গবেষকদের মতে যে অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের GABA(গামা-অ্যামিনোবুটারিক অ্যাসিড) রিসেপ্টরগুলির সাথে যোগাযোগ করে যা সার্কেডিয়ান ছন্দ এবং আমাদের ঘুম ও জাগরণ চক্রকে একসাথে নিয়ন্ত্রণ করে। 

স্ট্রেস শুধুমাত্র দিনের বেলা অতিরিক্ত তন্দ্রার সাথেই জড়িত নয় বরং ঘুমের গুণমান নষ্ট, বিষণ্ণতা এবং দীর্ঘস্থায়ী নিদ্রাহীনতার সাথেও জড়িত। 

অশ্বগন্ধার সকল সক্রিয় উপাদানগুলোর  মধ্যে, উইথানোলাইড হল অশ্বগন্ধার প্রধান উপাদান এবং স্ট্রেস-রিলিভিং সুবিধার প্রধান উৎস।

এইচপিএ হল হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি এবং অ্যাড্রিনালের সংক্ষিপ্ত রূপ যা আমাদের সারাদিনের কর্ম চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এইচপিএ এর চক্র সঠিকভাবে কাজ করে, তখন আমরা সকালের দিকে সজাগ ও সক্রিয় বোধ করি এবং দিনের সাথে সাথে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি ঘটে যখন কর্টিসলের মাত্রা দিনের বেলা বাড়তে শুরু করে এবং রাত নামার সাথে সাথে কমে যায়। 

Also Read:  কেন খাব লাল চাল?

যাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কর্টিসলের মাত্রা থাকে তাদের প্রায়ই ঘুমের সমস্যা হয়। উল্লেখ্য, মূত্রগ্রন্থির সমস্যায়আক্রান্ত ব্যক্তিদের কর্টিসল-সম্পর্কিত ক্লান্তি অনুভব করার ঝুঁকি বেশি থাকে।

শরীরের এই এইচপিএ চক্র নিয়ন্ত্রণে অশ্বগন্ধা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে অশ্বগন্ধা দিনের বেলায় উপযুক্ত সময়ে স্বাস্থ্যকর কর্টিসলের মাত্রা উন্নীত করতে সাহায্য করে।  

অশ্বগন্ধা এবং অন্যান্য ঘুমের ওষুধের মধ্যে পার্থক্য কি!

অশ্বগন্ধাকে সরাসরি অন্যান্য প্রাকৃতিক, চিকিৎসক নির্ধারিত বা অন্য কোনো  ঘুমের ওষুধ এর সাথে তুলনা করার জন্য তেমন কোনো গবেষণা নেই। মনে রাখতে হবে, সমস্ত ঘুমের ঔষধেরই সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

অনিদ্রার জন্য ২০টিরও বেশি প্রাকৃতিক প্রতিকারের মধ্যে তুলনামূলক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ভ্যালেরিয়ান, প্যাশনফ্লাওয়ার এবং অশ্বগন্ধা সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে। এদের মধ্যে অশ্বগন্ধার প্রাকৃতিক ঘুমের উপকরণগুলির কার্যকারিতা অন্যান্য প্রতিষেধক থেকে বেশি। 

আপনাকে এমন ঘুমের ঔষধ, পরিপূরক বা ভেষজ বেছে নিতে হবে যা আপনার ঘুমের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে এবং আপনি বর্তমানে যে ঘুমের সমস্যাগুলো অনুভব করছেন তার জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ করবে। 

কার্যকরী ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা কীভাবে সেবন করবেন?

ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা ব্যবহার করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করা। 

অশ্বগন্ধা গ্রহণের জন্য কোন সেরা সময় নেই। অনেকে এটি দিয়ে তাদের দিন শুরু করতে পছন্দ করে, আবার অনেকে রাতে ঘুমানোর আগে গ্রহণ করে। আক্ষরিক অর্থে পছন্দটি আপনার এবং আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও সহনশীলতার উপর নির্ভর করবে।

অশ্বগন্ধা পাউডার, বড়ি, চা, সহ অনেক রূপে পাওয়া যায়, কিন্তু পাউডার ব্যাপকভাবে কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত। অনেক সময় অশ্বগন্ধাকে সর্বোত্তম ফলাফল দেওয়ার জন্য অন্যান্য প্রাকৃতিক ভেষজ এবং ভিটামিনের সাথে মিশ্রিত করা হয়। অশ্বগন্ধা সেবনের কোন নির্দিষ্ট ডোজ নেই। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন অবস্থার উপর নিভর করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন –

  • সকালে অশ্বগন্ধা গ্রহণ

ঘুমের ওষুধ বা অনেক প্রতিষেধক গুলো খুব দ্রুত কার্যকর হয়, কিন্তু অশ্বগন্ধার প্রভাব বা সুবিধাগুলি আপনি দ্রুত অনুভব করবেন না। ঘুমের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে আপনার নিয়মিত ব্যবহারের কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। 

অনেক লোক তাদের ঐতিহ্যগত ভাবেই সকালে খাবার এর অংশ হিসাবে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করেন, তবে খালি পেটে খাওয়ার ফলে অনেকের হালকা অস্বস্তি বা পেট খারাপ হতে পারে। তাই আপনি যদি চান তবে সকালের নাস্তার সাথে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করতে পারেন প্রয়োজনমত।

  • রাতে অশ্বগন্ধা গ্রহণ
Also Read:  কিভাবে বুঝবেন আপনার পরিপাকতন্ত্রের মেরামত জরুরি?

আপনি যদি অশ্বগন্ধাকে এর প্রশান্তিদায়ক সুবিধার জন্য গ্রহণ করেন তবে এটিকে আপনার রাতের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে আপনি যদি পেট বা অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা প্রবণ হন, তাহলে রাতে থেকে সকালে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করাই ভাল। 

দিন বা রাতের যেই সময় হোক, আপনার সুবিধামতন নিয়মিত সেবন করুন। তবেই এর সুবিধা ও উপকারিতা পাবার সম্ভাবনা বেশি।

অশ্বগন্ধা কি আপনার জন্য সঠিক?

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ অনিদ্রার সমস্যা সমাধান করার উপায় এবং প্রেসক্রিপশন বা ওটিসি ওষুধের ব্যবহার ছাড়াই মানসম্পন্ন ঘুমের উপায় হিসাবে এই প্রাকৃতিক ঔষধ গ্রহণ করছেন। যারা ঘুমের জন্য বিকল্প প্রতিকার খুঁজছেন তাদের জন্য অশ্বগন্ধা একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে। 

তবে ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা সেবন করার আগে নীচের সমস্যাগুলো আপনার রয়েছে কিনা বিবেচনা করতে হবে কেননা অশ্বগন্ধা এই জটিল রোগে ব্যবহৃত ওষুধের সাথে ইন্টারফেয়ার করতে পারে। যারা অশ্বগন্ধা সেবন থেকে বিরত থাকবেনঃ

  • থাইরয়েডের ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তি 
  • অটো-ইমিউন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি 
  • যেই মহিলারা গর্ভবতী, গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করছেন বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন
  • যারা সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, বা ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচার নির্ধারিত রয়েছে

বর্তমান সময়ে ঘুমের সমস্যা নেই এমন মানুষ এর সংখ্যা অনেক কম। তাই তাঁদের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন কার্যকরী একটি সমাধান “অশ্বগন্ধা”। প্রথম দিকে অশ্বগন্ধা সেবন সবাইকে স্যুট নাও করতে পারে। তাই খুব সামান্য পরিমাণে (চা-চামচের অর্ধেক) সেবন করতে হবে।

জেনে রাখা প্রয়োজনঃ প্রায় ২০০০ মানুষ BanglaPure অশ্বগন্ধা ব্যবহার করার পর ১৮ জন ব্যক্তি প্রথম দিনে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন, যা আমরা দ্রুততম সময়ে সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করেছি। দুর্বল পরিপাক ব্যবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রথম ১-২ দিন সাময়িক অস্বস্তি হতে পারে (যেমনঃ গ্যাস্ট্রিক, বমিভাব, ইত্যাদি)। এক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় BanglaPure Careline 01316119595 নাম্বারে কল করে পরামর্শ নিবেন।

মনে রাখবেন, সকল প্রাকৃতিক ভেষজ পণ্য সবার ক্ষেত্রে শুরুতেই স্যুট করে না। কারন একেকজন এর হজম ক্ষমতা একেকরকম। তাই এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা যা মাত্র ২-৫% মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে এবং এতে ভয়ের কিছুই নেই।

চারদিকে যখন ভেজালে সব কিছু সয়লাব, তখন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কেমিক্যাল মুক্ত এবং সুলভ মূল্যে অশ্বগন্ধা পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন BanglaPure ওয়েবসাইটে। আপনাদের সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান নিয়ে পাশে আছি আমরা। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *