নিয়মিত ঘুম না হলে অন্ধকার ভবিষ্যৎ
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে একজন মানুষ ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন যার কারণে একটি সুন্দর জীবনও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ সার্জনস ফর স্লিপ আপনিয়া- এর জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু বলছেন বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ৪৫-৫০ ভাগ মানুষের ঘুম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে যা থেকে বিষন্নতাসহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম। স্বাভাবিক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তবে বয়স অনুযায়ী শরীরে ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়।
সাধারণত পূর্ণবয়স্ক মানুষদের ৭-৮ ঘণ্টা, শিশুদের ৯-১৩ ঘণ্টা, নবজাতক বাচ্চাদের ১২-১৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, টক্সিন নামক পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিয়ে কর্মক্ষমতাও বাড়ে। সুতরাং পরবর্তী দিনের শক্তি ও দক্ষতার অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তির পর্যাপ্ত ঘুমের ওপর।
রাতে ঘুম না আসা বা আসলেও বারবার ভেঙ্গে যাওয়াকে বলা হয় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ। যার ফলে দিনের বেলা ঘুমোনো, সারাদিন ঝিমুনি ভাব, কাজে মনোযোগ না দিতে পারা, সারাদিন মেজাজ খিটখিটে ও বিষণ্ণ হয়ে থাকার মত ঘটনা ঘটতে পারে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই ইনসমনিয়া হতে পারে।
বর্তমান প্রজন্মের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কারণে আমরা অনেকেই ইনসমনিয়ার ভুক্তভোগী। এই সমস্যা এখন এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে অনিদ্রাকে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলছে কেউ কেউ।
অধ্যাপক ওয়াকার ‘হোয়াই উই স্লিপ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিশ্বের একটা বিশাল অংশ অন্ধকারে জেগে থাকে। যে ঘুম তাদের নষ্ট হচ্ছে, সেটা যে পূরণ করা দরকার, সেটা তারা ভাবে না।
অনিদ্রা স্বাস্থ্যের যা ক্ষতি করে
ঘুম কম হওয়া বা ঘুমের সমস্যার কারণে ব্যক্তি শারীরিকভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ পর্যন্ত ১৫৩টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। জার্নাল সায়েন্সের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অনিদ্রার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
এক গবেষণা বলছে, কেউ টানা ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা জেগে থাকলে মস্তিষ্কে যে ধরনের প্রভাব পড়ে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেও একই ধরনের প্রভাব পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গবেষণায় বলছে, দীর্ঘদিন ঠিকমত ঘুম না হলে স্বাভাবিক আচরণ ও দৈনন্দিন কাজেকর্মে মারাত্মক প্রভাব পড়ে যা তাকে শর্ট টাইম মেমোরি লস থেকে শুরু করে হেলুসিনেশন, এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতির দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
অনিদ্রা দূর করার উপায়
অনেকে ঘুমের সমস্যা দূর করতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন। এটি স্বাস্থ্যকে আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমানোর প্রবণতা, একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। যার ফলে স্লিপিং পিল সেবন না করলে স্বাভাবিকভাবে আর ঘুম আসে না।
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে পারে। এটি মানুষের হার্ট ও ব্রেনের রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। অনেকসময় অতিরিক্তি ঘুমের ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্তির প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে। অনিদ্রা দূর করার একমাত্র উপায়ই হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সমস্যায় দারুণ উপকারী অশ্বগন্ধা
হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের নানা উপকারে কাজে লাগছে অশ্বগন্ধা (Ashwagandha)। আয়ুর্বেদের এই উপাদানের উপকারিতা অনেক। নানা কাজে ব্যবহৃত হয় এটি। রোজকার তালিকায় রাখলে স্ট্রেস দূর করা থেকে ভালো ঘুম হওয়া এবং আরও অনেক উপকার করে।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
১. পুরুষদের জন্য অত্যন্ত উপকারী অশ্বগন্ধা। পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাঁদের ফার্টিলিটির মাত্রা বৃদ্ধি করে। পুরুষদের শুক্রাণুর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয় প্রতিদিন তালিকায় অশ্বগন্ধা রাখলে। প্রতিদিন অশ্বগন্ধা খাওয়াও খুব সহজ। এর গুঁড়ো বাড়িতেই রাখতে পারেন। আর তা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রাতে খেতে পারেন। তাহলেই উপকার পাবেন।
২. যাঁদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য দারুণ উপকারী অশ্বগন্ধা। নিয়মিত দুধের সঙ্গে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, টানা অন্তত ৮ সপ্তাহ খেলে তবেই তফাতটা বুঝতে পারবেন। অনিদ্রার সমস্যায় বিশেষজ্ঞরা অশ্বগন্ধা সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
৩. মস্তিষ্ক সচল রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী অশ্বগন্ধা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। তার সঙ্গে বয়সকালে স্মৃতিভ্রংশের সমস্যাও দূর হয়।
৪. যাঁদের মধুমেহ রোগের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য উপকারী অশ্বগন্ধা। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মধূমেহ দূরে রাখে এবং রক্তে শর্করা বাড়তে দেয় না।
৫. স্ট্রেসের সমস্যা কমায় অশ্বগন্ধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের দিনে নানা কারণে স্ট্রেসের সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। সেই স্ট্রেসের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত খাওয়া দরকার অশ্বগন্ধা। দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। স্ট্রেস, অবসাদ, উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা দূর করে।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। আয়ুর্বেদিক উপাদান হিসেবে অশ্বগন্ধা আরও নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই এর উপকারিতা অনেক। তাই সুস্থতার জন্য নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অগ্রীম পেমেন্ট ছাড়াই BanglaPure ভার্জিন গ্রেড অশ্বগন্ধা পাউডার কিনুন